ঘৃতকুমারীর যত গুণ । ঘৃতকুমারী খাওয়ার উপকারিতা । Aloe vera

 ঘৃতকুমারীর যত গুণ

Aloe vera

. ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ ভাবে কার্যকর 

. চুলের জন্যও বেশ ভালো একটি উপকারী উপাদান। 

. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। 

. রস রক্তের সাথে মিশে রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। 

. হজমে মহওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

 

এই গাছ প্রায় দেড় হাত পর্যন্ত লম্বা হয় পাতার নিচের দিকটা গোল এবং পাতার ওপরের দিকটা সমান এবং ভোতাপাতার রং হালকা সবুজ এবং বেশ পুরু পাতার কিনারা করাতের দাঁতের মতো পাতার ভিতরে শাঁস থাকে শাঁস-টা আঠার মতো চটচটে -খেতে তেতো এই গাছ থেকে যে হলুদ রঙের আঠা বের হয় তা রোদে শুকিয়ে নিয়ে মুসব্বর তৈরী করা হয় কবিরাজরা বিভিন্ন অসুখে এই মুসব্বর ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে

ঘৃতকুমারী ফুলের ডাটা সরু এবং লম্বা হয়। ফুলের রং অনেকটা লেবুর মতো। শীতকালের শেষে এই গাছের ফুল ফোটে এবং ফাল্গুন /চৈত্র মাসে ফল দেখা যাই

ঘৃতকুমারী পুষ্টিকাৰক, চোখের পক্ষে ভালো , জ্বর, কফ , দোষ, প্লীহা , চর্মরোগ ,প্রভিতি রজার ভালো ওষুধ। এই গাছের জন্ম আরব দেশের। ভারতে ওষধি উদ্ভিদ রূপে বর্তমানে এই গাছ প্রায় সব জায়গায় দেখা যাই 

ঘৃতকুমারী শুনে অনেকে ভুরু কোঁচকালেও কিন্তু একে সবাই অ্যালোভেরা নামে ভালোই চেনেন ঔষধি এই ভেষজের নানা গুণের কথা পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অঞ্চলের মানুষের জানা শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয় এই উদ্ভিদ খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর তেমনি তা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহারযোগ্য ঘৃতকুমারীর রস পান করে, সালাদ হিসেবে খেয়ে এবং ত্বক চুলে ব্যবহার করে আপনিও দারুণ উপকৃত হতে পারেন

ভিটামিন খনিজ


অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নানা ধরনের ভিটামিন খনিজের এক সমৃদ্ধ উৎস ভিটামিন-,সি,, ফলিক অ্যাসিড, কোলিন, বি-১, বি-২, বি-৩ (নিয়াসিন) ভিটামিন বি-৬ এর দারুণ উৎস এটা অল্পসংখ্যক উদ্ভিদের মধ্যে ঘৃতকুমারী একটি যাতে ভিটামিন বি-১২ আছে প্রায় ২০ ধরনের খনিজ আছে ঘৃতকুমারীতে এর মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার ম্যাংগানিজ


চাপ রোগ প্রতিরোধ


ঘৃতকুমারী দারুণ অ্যাডাপ্টোজেন শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে বাহ্যিক নানা চাপ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী উপাদানকে অ্যাডাপ্টোজেন বলা হয়ে থাকে ঘৃতকুমারী দেহের অভ্যন্তরীণ পদ্ধতির সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করে তোলে এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে শারীরিক মানসিক চাপ মোকাবিলার পাশাপাশি পরিবেশগত দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকে সুরক্ষা দিতে পারে ঘৃতকুমারী

ঘৃতকুমারীর রস খুবই আঠালো এমন উদ্ভিদের আঠালো রস পানের একটা দারুণ ব্যাপার হলো খাদ্যনালীর ভেতর দিয়ে দেহের ভেতরে প্রবেশের সময় থেকেই পুরো পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করতে করতে যায় এই রস দেহের অভ্যন্তরীণ নানা টক্সিন বা দূষিত উপাদান শুষে নিয়ে মলাশয় দিয়ে বের হয়ে যায় ফলে দেহকে ভেতর থেকে দূষণ মুক্ত করতে ঘৃতকুমারীর তুলনা নেই

সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার-দাবারে অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাদ্য অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হয় ক্ষেত্রে ৮০/২০ বা ৮০ ভাগ অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাবার ২০ ভাগ অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদেরা ঘৃতকুমারী এমন খাবার যা অ্যালক্যালাইন তৈরি করে কিন্তু আজকাল নগরজীবনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে প্রায়শই অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগতে হয় ফলে অতিরিক্ত অ্যাসিডের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে মাঝে মধ্যে ঘৃতকুমারী খান

মানব দেহের নানা প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড এমন ২২টি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এর মধ্যেটিকে অত্যাবশ্যক ঘৃতকুমারীতে শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক এইটি অ্যামাইনো অ্যাসিডই আছে আর এতে মোট অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে ১৮ থেকে ২০ ধরনের ছাড়া নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডেরও দারুণ উৎস এই ঘৃতকুমারী

শরীরে নানা ধরনের প্রদাহ দূর করতে খুবই কার্যকর ঘৃতকুমারী এতে বি-সিসটারোল সহ এমন ১২টি উপাদান আছে যা প্রদাহ তৈরি হওয়া ঠেকায় এবং প্রদাহ হয়ে গেলে তা কমিয়ে আনে ঘৃতকুমারীর এই সব গুণ হাত-পায়ের জোড়ার জড়তা দূর করে এবং গিঁটের ব্যথা কমাতেও সহায়তা করে

ঘৃতকুমারী খাওয়ার উপকারিতা


Aloe vera

) হার্ট সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরা :- আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার জুস অ্যালোভেরা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্তর করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে

) মাংসপেশী জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ অ্যালোভেরা :- অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়

) দাঁতের যত্নে অ্যালোভেরা :- অ্যালোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা উপশম করে থাকে। দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব

) ওজন হ্রাস করতে অ্যালোভেরা :- ওজন কমাতে অ্যালভেরা জুস বেশ কার্যকরী। ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে মেদ জমে। অ্যালোভেরা জুসের অ্যাণ্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান এই প্রদাহ রোধ করে ওজন হ্রাস করে থাকে। পুষ্টিবিদগণ এই সকল কারণে ডায়েট লিস্টে অ্যালোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন

) হজমশক্তি বাড়াতে অ্যালোভেরা :- হজমশক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা জুসের জুড়ি নেই। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে থাকে। অ্যালোভেরা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক ভাল কাজ করে

) ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে অ্যালোভেরা :- অ্যালোভেরা জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত এর জুস খাওয়া গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং খাওয়ার আগে বা খাওয়ার পরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে

) ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা :- ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। অ্যালোভেরার অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়

) রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা :- অ্যালোভেরা হল অ্যান্টি ম্যাইকোবিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ একটি গাছ। অ্যালোভেরা জুস নিয়মিত পান করলে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন উপাদান করে দূর করে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে

) মুখের দূরগন্ধ দূর করতে অ্যালোভেরা :- অ্যালোভেরায় আছে ভিটামিন-সি, যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। গবেষণাই দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার জেল মাউথ ওয়াশ এর বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়

১০) চুল সুন্দর করতে অ্যালোভেরা :- অ্যালোভেরার গুনাগুন বলে শেষ করা যাই না, মাথায় খুশকি দূর করতে এর কোন তুলনা নেই। এমনকি ঝলমল চুলের জন্যেও অ্যালোভেরা অনেক উপকারী। সুতরাং চুলের যত্নে অ্যালোভেরা আপনার নিত্যসংগী

১১) মুখের ঘা সারাতে অ্যালোভেরা :- অনেকের মুখে ঘা হয়, আর এই মুখের ঘা দূর করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকারী। ঘায়ের জায়গায় এলভেরার জেল লাগিয়ে দিলে মুখের ঘা ভাল হয়

১২) ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা :- গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যান্সার ছড়ানো থেকে রোধ করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে

১৩) রক্তচাপ কমাতে সাহায্য কর :- অ্যালোভেরার অনেক গুনাগুনের মধ্যে আর একটি হল রক্তচাপ কমাতে এর কোন তুলনা নেই। অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে

১৪) ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণ করতে :- কিছু ক্ষতিকর পদার্থ দেহের মধ্যে প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে তা দেহের জন্য মোটেও ভাল কিছু নয়।এই সকল ক্ষতিকর পদার্থ দেহ থেকে অপসারণ প্রয়োজন। অ্যালোভেরার রস পান করলে দেহের ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করতে পারে না। আর যদি প্রবেশ করেও ফেলে, তাহলেও অ্যালোভেরার জুস পানে তা অপসারণ হতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার জুসের গুন অপরিসীম

১৫) চর্মরোগ ক্ষত সারাতে :- অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ঔষধিরও কাজ করে থাকে। বিভিন্ন চর্মরোগ ক্ষত সারায় এই অ্যালোভেরার জুসে। অনেক সময় প্রাথমিক চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয় এই অ্যালোভেরা

১৬) ক্লান্তি দূর করতে :- দেহের দুর্বলতা দূর করতে অ্যালোভেরার জুসের গুন অনেক। আপনি যদি অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করেন তাহলে দেহের ক্লান্তি দূর হবে এবং দেহকে সতেজ সুন্দর রাখবে

১৭) কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে:- অ্যালোভেরার জুসের মধ্যে যে জেল থাকে তার অনেক গুন। এই জেল নিয়মিত পানে পেটের সমস্যা দূর হবে। আর যদি সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়া সম্ভাব। এছাড়া অ্যালোভেরা জেলে প্রায় ২০ রকম অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম, বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে থাকে

 


ঘৃতকুমারীর যত গুণ । ঘৃতকুমারী খাওয়ার উপকারিতা । Aloe vera ঘৃতকুমারীর যত গুণ । ঘৃতকুমারী খাওয়ার উপকারিতা । Aloe vera Reviewed by abdul motaleb on September 07, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.